ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদি সন্ত্রাস মোকাবেলায় ছাত্রসমাজই জাতির ভরসা-কমরেড খালেকুজ্জামান

ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদি সন্ত্রাস মোকাবেলায় ছাত্রসমাজই জাতির ভরসা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য-কৃষ্টি তথা মুক্তবুদ্ধিও চর্চার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে
ছাত্র ফ্রন্টের মতবিনময় সভায় কমরেড খালেকুজ্জামান

040816-SSF View exchange-1সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আগষ্ট ২০১৬ বেলা: ১১.০০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংগঠনের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমনের সভাপতিত্বে গুলশান, শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে “ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী হামলা ও রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা, গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়সভায় আলোচনা করেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষাবিদ ড. অজয় রায়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক রেজা-ই-করিম খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. ফাহমিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু ও সঞ্চালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স।
040816-SSF View exchange-2মতবিনিময়সভায় কমরেড খালেকুজ্জহামান বলেন, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী এই সন্ত্রাসী তৎপরতার দুই ধরণের অভিঘাত রয়েছে। একদিকে সারা দুনিয়া জুড়ে অর্থনীতির সামরিকীকরণ, অস্ত্র ব্যবসা, জ্বালানি সম্পদ দখল ও ভূরাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ স্থাপনে দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন আর তার ফলশ্রুতিতে সঠিক কারণ অনুসন্ধান না করে একদল একে ধর্মযুদ্ধ বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে খৃষ্টান-ইহুদীদের যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করছে আবার দেশীয় প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালীন সময়ে শাসক বুর্জোয়া শ্রেণীর অবাধ লুন্ঠনের ফলে সৃষ্ট ধন বৈষম্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব-অনাচার তার সাথে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা টিকে থাকার স্বার্থে মৌলবাদী এই শক্তিকে নানাভাবে আশ্যয়-প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। স্বাধীনতার পর এরা ইসলামি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে ও ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়েছে, সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ বসিয়েছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে, ভোটের রাজনীতিতে প্রত্যেক বুর্জোয়া দলই ধর্মকে ব্যবহার করেছে, যা মুক্তিযুদ্ধেও চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। আর এরই বিষময় ফল জাতিকে ভোগ করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানে এক ধারার শিক্ষার কথা বলা হলেও শিক্ষা ব্যবস্থা বহু ধারায় বিভক্ত যা জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার বদলে কূপমন্ডুক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। আর গোটা শিক্ষাব্যবস্থায়ই দেশীয় শিল্প. সাহিত্য, সংস্কৃতি ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টিকে উপেক্ষা করে জাতিকে শিকড়বিহীন পরগাছা জাতিতে পরিণত করেছে। এই অন্ধকার সময়ে জাতির এই সংকট উত্তরণে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজ তথা রাষ্ট্র ছাত্র-যুবকদের সৃষ্টিশীল কর্মতৎপরতার ক্ষেত্র তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এর ফলেই সমাজে উগ্রবাদীরা তাদেও ক্ষেত্র তৈরি করতে পেরেছে। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো বন্ধ রয়েছে, অবিলম্বে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, একের পর এক লেখক-প্রকাশক, ভিন্নমতের মানুষকে হত্যা করা হলেও সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিও জানান তিনি।
040816-SSF View exchange-3অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা একটা চরম সংকটে পতিত হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থায় কোন বিশ্লেষণী ক্ষমতা তৈরি করার, চিন্তা করার, তর্ক-বিবতর্ক করার পরিবেশ তৈরির উদ্যোগ নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতি বন্ধ করে দিয়ে গর্ব করা হচ্ছে। আর এই বদ্ধ অবস্থাই সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর দখলদারীত্ব, হল দখল-সীট বাণিজ্য ইত্যাদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক চরম অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করেছে। এর বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশ জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষার দাবিতে তীব্র জোয়ার তৈরি করতে হবে। তাহলেই এই জঙ্গিরা আর স্থান করতে পারবে না।
অধ্যাপ রেজা ই করিম খন্দকার বলেন, সারা দুনিয়া জুড়ে এই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর উত্থানের পিছনে সাম্রাজ্যবাদী-পুজিঁবাদী অর্থনৈতিক কাঠামোই দায়ি। মৌলবাদ-পুজিঁবাদ-সাম্রাজ্যবাদ আজ একসূত্রে গাথাঁ। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ বলেন, বামপন্থী শক্তির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান তিনি।

Translate »