পুঁজিবাদী শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান
বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতার ৮৪তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতার ৮৪ তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর উদ্যোগে আজ ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল ৪.৩০ টায় শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর সভাপতি রওশন আরা রুশো। আলোচনা করেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলÑবাসদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড জাহেদুল হক মিলু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরান হাবীব রুমন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসিরুদ্দিন প্রিন্স।
আলোচনা সভায় কমরেড জাহেদুল হক মিলু বলেন বলেন, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের নারী শহীদ বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এ উপমহাদেশের জনগণকে ২০০ বছরের পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ রেখেছিল ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদ। রাজনৈতিকভাবে পরাধীন, অর্থনৈতিক লুণ্ঠন আর নৈতিকভাবে পর্যদুস্ত রেখেছিল বলেই মাত্র এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সামরিক আর চার হাজার সিভিল প্রশাসকের শক্তিতেই তারা তাদের শোষণ-শাসন ও লুণ্ঠন চালাতে সক্ষম হয়েছিল। ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের সূর্য অস্তমিত করা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের পাশে নারীরাও লড়াই করতে পারে এ চেতনা জাগাবার জন্যে মাস্টারদা বেছে নিয়েছিলেন প্রীতিলতাকে। প্রীতিলতাও মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে গ্রহণ করেছিলেন জীবন দিয়ে জীবন জাগাবার মন্ত্র ‘do and die’। মাত্র একুশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে জাগিয়ে তুলেছিলেন ভারতবাসীকে, ত্বরান্বিত করেছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলন, নারীদের সম্পর্কে সমাজের সংস্কারে করেছিলেন প্রচণ্ড আঘাত।
সভায় বক্তারা প্রীতিলতার জীবন সংগ্রাম তুলে ধরে বলেন, শৈশবে মেধাবী প্রীতিলতা পড়েছেন চট্টগ্রামের ডাঃ খাস্তগীর স্কুলে। ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান নিয়ে পাশ করেছিলেন আইএ। এই সময় বাংলার বিপ্লবী সংগঠন ‘দীপালি সংঘ’-এর নেত্রী লীলা নাগের সংস্পর্শে আসেন। পরে ভর্তি হন কলকাতার বেথুন কলেজে। ডিস্টিংকশন নিয়ে বিএ পাস করে চট্টগ্রামে ফিরেই যোগ দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের দলে। অপর্ণাচরণ স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি চালিয়ে যান বিপ্লবী কর্মকা-। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৭ জন সঙ্গী নিয়ে আক্রমণ করেন পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব। দাম্ভিক ব্রিটিশেরা যেখানে সাইনবোর্ডে লিখে দিয়েছিল ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। সফল আক্রমণ শেষে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। জীবিত ধরা না পড়ার পূর্ব পরিকল্পনায় অবিচল থেকে তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন।
বক্তরা বলেন, ইতিহাসের সংগ্রামী চেতনা, অতীতের বড় চরিত্র বর্তমান সংগ্রামে পথনির্দেশ করে। প্রীতিলতাসহ অগ্নিযুগের অগ্নি সন্তানেরা নতুন প্রজন্মকে সংগ্রামী মানুষ হতে শেখায়; অন্যায় করা নয়, অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করা নয়, অন্যায়কে রুখে দিতে শেখায়।
বক্তাগণ বলেন, আজ থেকে ৮৪ বছর আগে প্রীতিলতা যে স্বাধীনতা, শোষণমুক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী শৃংখল মুক্তির জন্য নির্ভিক চিত্তে জীবন দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও মানুষ পুঁজিবাদী শোষণের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, সুন্দরবন ধ্বংস করে দেশী-বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে সরকার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করছে, তেমনি রূপপুরে রাশিয়ার পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাশখালীতে কৃষি জমি ধ্বংস করে চীনা কোম্পানির সহায়তায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়িতে জাপানী কোম্পানির কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি সব কিছুই জনগণ না দেশী-বিদেশী লুটেরাদের মুনাফার স্বার্থে হচ্ছে।
বক্তাগণ প্রীতিলতার সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে পুঁজিবাদী শোষণ ও সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।