রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
অবিলম্বে গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান অন্যথায় হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারী
———————————————- বাসদ
রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণার প্রতিবাদে এবং বন্ধ বা পিপিপি নয়, আধুনিকায়ন করে পাটকল চালু রাখার দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ঢাকা মহানগর এর উদ্যোগে আজ ৩ জুলাই ২০২০ সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বাসদ ঢাকা মহানগর কমিটির আহŸায়ক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ ঢাকা নগর কমিটির সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, সদস্য আহসান হাবিব বুলবুল, খালেকুজ্জামান লিপন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়।
তাৎক্ষণিকভাবে নেয়া কর্মসূচিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটে এতই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে যে দেশের সকল প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক শক্তি এবং শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষা করে, প্রতারণামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে। স্কপ এর পক্ষ থেকে দেয়া ১০০০/ ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাটকলসমূহ আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক করার প্রস্তাব উপেক্ষা করে লোকসানের অজুহাতে ৬০০০ কোটি টাকা ব্যয় করে রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধ করে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিচ্ছে। এ সংবাদ প্রকাশিত হলে শ্রমিকরা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত ২৯ জুন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পাটকল শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত পাটকল চালু রাখার পরে বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলা হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে। কিন্ত গতকাল রাত্রে আকষ্মিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মূখ্য সচিব গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতারণামূলকভাবে গত ১ জুলাই থেকেই রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহের উৎপাদন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। যা শ্রম আইনের লংঘন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের এই প্রতারণামূলক কৌশল মুনাফালোভী বেসরকারি মালিকদের আরও উৎসাহিত করবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে সরকার – মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যেকার শিল্প বিরোধ মিমাংসাকারী হিসাবে কাজ করার নৈতিকতাও হারাল। কমিশন বা সুবিধাভোগী না হলে সরকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ বেসরকারী মালিকদের হাতে তুলে দিতে এত আগ্রাসী কেন? সেই প্রশ্ন রেখে নেতৃবৃন্দ বলেন, পাটশিল্পে ৪৪ বছরে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার লোকসানের জন্য যে ভর্তুকির কথা বলা হচ্ছে তা শুধু শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে দেয়া হয়নি। তাছাড়া জ্বালানি খাতে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ১০ বছরে উৎপাদন না করে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৬২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকী দিয়েছে। গত ৪৮ বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে ব্যাংক ডাকাতদের, করোনার সময়েও পোষাক শিল্প ৫ হাজার কোটি টাকা, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র-মাঝারী শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকা বেসরকারি খাত রক্ষায় প্রণোদনা দিয়েছে অথচ রাষ্ট্রীয় পাট খাত রক্ষায় কোন প্রণোদনা নাই। এ থেকে বুঝা যায় সরকার ব্যক্তিমালিক লুটেরাদের স্বার্থ রক্ষাকারী।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিপূর্বে অনেক রাষ্ট্রীয় কারখানা বেসরকারিকরণ করা হয়েছে গোল্ডেন হ্যান্ডসেক দিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে তারা কেউ পুরো টাকা পায় নি। কারখানাগুলোও অনেকগুলো বন্ধ হয়েছে। আবার অনেক কারখানা পিপিপি’র মাধ্যমে চালানোর কথা বলে ব্যক্তিমালিকদের দেয়া হয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও ভাল না। তারা অনেকে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। বেশ কয়েকটা বন্ধ হয়েছে। তাই পিপিপিতে পাটকল চালানোর কথা প্রতারণার আরেক ফাঁদ।
নেতৃবৃন্দ ভুলনীতি, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা আর আমলাদের দুর্নীতির দায় শ্রমিকদের উপর চাপিয়ে পাটকল বন্ধ করার মত অন্যায় ও গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আবরোধ-হরতালের মত কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।