আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানোর চক্রান্তের প্রতিবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পেশ
ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশকে মরুভূমি বানানোর ভারতীয় উদ্যোগের প্রতিবাদে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর উদ্যোগে আজ ১৬ জুন ২০১৬ সকাল ১১.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবর সামনে এক গণসমাবশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এর কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন বাসদ কন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান।
বক্তব্য রাখেন কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাহেদুল হক মিলু, রাজেকুজ্জামান রতন। কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহম্মদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এর প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা করলে পুলিশ মতিউল-কাদের চত্বরে (কদম ফোয়ারায়) বাধা দেয়। সখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে কমরেড খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাহেদুল হক মিলুসহ ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সমাবেশে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুময় বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নে পতিত। পানি ও পলিমাটির এই দেশ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে দিন দিন। এটা কোন প্রাকৃতিক কারণে নয়, ভারত কর্তৃক একতরফা বাধ দেয়ায় বন্ধ হচ্ছে পানির প্রবাহ, শুকিয়ে যাচ্ছে নদীগুলো। পাশাপাশি দেশের ভেতর নদী, খাল-বিল দখলের মচ্ছব চলছে। ৫৭টি নদী বাইরে থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে আর ৩টি এসেছে বার্মা থেকে। ভারত ইতিমধ্যেই ৫১টি নদীর উজানে বাঁধ দিয়েছে। এবার আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি উত্তর ভারতে নিয়ে যাওয়ার মহাপরিকল্পনা করছে। ভারত ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মার পানি কেড়ে নিয়েছে, গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি কমিয়েছে এবার ব্রহ্মপুত্রের উপর নজর পড়েছে। টিপাই মুখে বাঁধ দিয়ে সুরমা, কুশিয়ারা, মেঘনার পানি প্রত্যাহারের চক্রান্ত বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের প্রতিবাদের মুখে আপাতত বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বাতিল হয়নি।ভারতের মন্ত্রী উমা ভারতী বলেছেন, “আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প আমাদের প্রধান এজেন্ডা”। এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের পরিণতি হবে ভয়াবহ। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা দিয়ে বাংলাদেশের মোট পানির প্রায় ৮০ শতাংশ আসে। এ পানি কমে গেলে উত্তরবঙ্গ তো শুকিয়ে যাবেই, সমুদ্রের লোনা পানি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত উঠে আসবে। ধ্বংস হবে বসত, কৃষি, শিল্প, প্রকৃতি পরিবেশ, মৎস্যসম্পদ, প্রাণী বৈচিত্র ইত্যাদি। একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীকে আন্তর্জাতিক নদী বলে। এ বিবেচনায় পদ্মা (তিন দেশ নেপাল-ভারত-বাংলাদেশ) ও ব্রহ্মপুত্র (চার দেশ চীন-ভুটান-ভারত- বাংলাদেশ) আন্তর্জাতিক নদী। আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী উজানের দেশ ভাটির দেশের স্বার্থ বিপন্ন করে কিছু করতে পারে না। জাতিসংঘের সাধারণ নীতি, আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত হেলসিংকি নীতি, আন্তর্জাতিক জলপ্রবাহ কনভেনশন কোন নীতিতেই ভারত বাংলাদেশের পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। ভারত তার নিজের দেশের কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে পানি আগ্রাসী কর্মকাণ্ডে অগ্রসর হলেও বাংলাদেশের সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর প্রতিবাদ করছে না। বাংলাদেশের অস্তিত্ব নির্ভর করছে যে নদী ও পানি প্রবাহের উপর তা আজ হুমকির মুখে। পদ্মায় ২০১৪ সালের জানুয়ারি ১ থকে ১০ তারিখ পর্যন্ত পানি প্রবাহ ছিল ৭০ হাজার ৮৫৩ কিউসেক আর এবার ২০১৬ সালে একই সময়ে পানির প্রবাহ ছিল ৩২ হাজার ৫১৬ কিউসেক। অর্থাৎ ৩৮ হাজার ৩৩৭ কিউসেক কম। এভাবে প্রতি বছরই পানির প্রবাহ কমছে।
ইতিমধ্যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে পানির অভাবে লাখ লাখ মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধের ফলে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এবং তিস্তার পানি প্রত্যাহারের ফলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বছর। অথচ ভারত রাষ্ট্র আমাদের পানি ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চললেও বাংলাদেশের নতজানু শাসক শ্রেণি প্রায় বিনা মাশুলে ভারতকে ট্রানজিট, বন্দর ব্যবহার, সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দিয়ে ভারতীয় পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। তাই আসুন, ভারতের শাসকশ্রেণির বন্ধুত্বের মিথ্যা আশ্বাসে নয় দেশের স্বার্থে প্রতিবাদী হই। আন্তর্জাতিক সমস্ত ফোরামে আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে সরকারকে বাধ্য করি।