ক্রসফায়ার নয়, মাদকের ভয়াবহতা নিরসনে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করুন
সরকারের প্রতি সিপিবি-বাসদ’র আহ্বান
ক্রসফায়ার নয়, মাদকের ভয়াবহতা নিরসনে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করুন
মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনানুগ পন্থায় কঠোর হস্তে দমনের দাবিতে ১১ জুন ২০১৮ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আহুত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্রসফায়ার নয় মাদকের ভয়াবহতা নিরসনে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করুন।
সারাদেশেব্যাপী ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন। সভা পরিচালনা করেন সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন।
সভাপতির বক্তব্যে কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম দেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বলেন, অসৎ পথে কোন সৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা যায় না। আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। মাদক গডফাদারদের রেহাই দিয়ে খুচরাদের হত্যার যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ আরো ঘনীভ‚ত হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার নয় বছর ধরে ক্ষমতাসীন এ সময়কালে সরকারের ব্যর্থতার কারণে মাদক ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সরকার দেশ শাসনে তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এবং আগামী নির্বাচনের আগে ভীতি ও আতংকের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একতরফাভাবে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে চায়। তিনি আরো বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পথ ধরেই ফ্যাসিবাদ আসে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মানি আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকে অস্বীকার করা।
তিনি মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত অপরাধীদের আইন করে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিধান চালুর দাবি করে বলেন, আমরা মাদকাসক্তি ও মাদক ব্যবসার ভয়াবহতার আগুন নিভাতে চাই আবার বিনাবিচারে ক্রসফায়ারের মানুষ হত্যার প্রতিহিংসার যে আগুন তাও নিভাতে চাই।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশের মাদকের প্রসার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক আজ দেশের প্রান্তিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। মাদক ব্যবসায়ী তালিকায় রয়েছে সরকার দলীয় সংসদ, স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, প্রভাবশালী রাজনৈতিকবৃন্দ, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দের নাম।
তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত, মায়ানমার থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবা চোরাচালান করে আমাদের দেশে এনে বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মাদকের ব্যবসা প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে।
তিনি মাদক ব্যবসায়ী চক্র গুড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান এবং সেই সাথে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে সরকারের চলমান আতংকের রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানান।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম বলেন, বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা ক্রমান্বয়ে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য উন্মোচিত করছে। তিনি দেশে আতংক ও ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান । আইনানুগ পন্থায় মাদক ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিদানের আহ্বান জানান।
বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, দেশে ৮০ লক্ষ মানুষ মাদকাসক্ত। দেশে মাদকের বাজার প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকায়। এ বিরাট ব্যবসা চলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছত্রছায়ায়। তিনি মাদকের সরবরাহ বন্ধের জন্য মাদকের উৎস নির্মূলের আহ্বান জানান।