গাজীপুরের সমাবেশে কমরেড ফিরোজ-জোট-মহাজোটের বাইরে জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলুন
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও মহান রুশ বিপ্লবের ৯৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাসদ গাজীপুর জেলার শাখার উদ্যোগে ১১ নভেম্বর নগরীর পুরাতন রেলষ্টেশন চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুর জেলা সমন্বয়ক কমরেড রাহাত আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ। আরো বক্তব্য রাখেন স্থানীয় নেতা ওসমান অালী, আব্দুল কাইয়ুম, আ: লতিফ, খাইরুল কবীর , হাবিবুর রহমান, রুহুল আমিন চানু, অচিন্ত বর্মণ, খোরশিদ আলম মিথুন, আল আমিন হা্ওলাদার শ্রাবণ।
কমরেড ফিরোজ বলেন, আমরা যখন আমাদের দলের ৩৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৯তমবার্ষিকী পালন করছি তখন দেশের মানুষ এক সর্বগ্রাসী সংকটে জর্জরিত। একদিকে খুন-হত্যা-সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের আক্রমণ ও আতংক অন্যদিকে উন্নয়নের নামে সীমহিীন লুটপাট জনজীবনকে অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে । প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া শ্রেণী শোষণ, লুটপাঠে মত্ত হয়ে দেশের জীববৈচিত্র ও প্রাণ-প্রকৃতির আধার সুন্দরবনকেও ধ্বংস করতে নূন্যতম বিবেচনা করছেনা। ভোটার বিহীন নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সরকার ক্রমাগত ফ্যাসিবাদী পথে অগ্রসর হচ্ছে। দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক শাসন, প্রশাসন, প্রথা-প্রতিষ্ঠান ক্রমেই ধ্বংস করে চলেছে। বাক-ব্যক্তি, সংবাদপত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করছে। গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন ভয়াবহ মাত্রায় বেড়ে চলছে। নতুন পে-স্কেল ঘোষণার মধ্যদিয়ে মাত্র ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও গার্মেন্টসসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি। অথচ পে-স্কেল ঘোষণার সাথে সাথে বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার মতো বৃদ্ধি পেয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুগুন বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম দুই তৃতীয়াংশ কমে যাওয়ার পরও দেশে দাম কমাচ্ছে না সরকার, উপরন্তু একের পর এক গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দুর্ণীতি, ডিজিটাল লুটপাটের যত উন্নয়ন ঘটছে, দেশে জনগণের নাগরিক অধিকারের উন্নয়ন কি ততোটা ঘটেছে? গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দিকে তাকালে বুঝা যায় দেশের উন্নয়নের কি বেহাল অবস্থা । এত বড় একটা সিটি কর্পোরেশন, লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবি মানুষের বসবাস অথচ অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ, পয়নিস্কাশন-ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, অলি-গলিতে বেসরকারি ক্লিনিক গড়ে উঠলেও সরকারি চিকিৎসা দুস্প্রাপ্য। রাস্তাঘাটের অভাব ও বেহাল অবস্থার কারণে স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয় । রাস্তাঘাট যতটুকু আছে তাও আবার অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠা কল কারখানার ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। কোন ধরণের নাগরিক সুবিধা না পেয়েও জনগণ কর্পোরেশনের কর দিতে বাধ্য হচ্ছে। গাজীপুরে বিষেশায়িত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও লক্ষ লক্ষ ছাত্রদের জন্য কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হচ্ছে না। রাষ্ট্র নাগরিকদের শিক্ষার দায়িত্ব অস্বীকার করছে। জনগণের এসকল সমস্যা সমাধান না করে শাসকেরা উন্নয়নের ঢাক বাজিয়ে চলেছে।
এ পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা শোষনহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই মুহূর্তে প্রয়োজন জোট-মহাজোটের বাইরে জনগণের বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা। বাসদ ও সিপিবি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই বিকল্প গড়ে তোলার সংগ্রাম করছে। অপরাপর বাম-গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকেও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। এ প্রচেষ্টা সফল করে বিকল্প শক্তির উত্থান ঘটাতে বাসদকে শক্তিশালী করুন।