চামড়া সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকায় বাসদের মানববন্ধন ও সমাবেশ
সরকার নির্ধারিত রেটের তোয়াক্কা না করে, সিন্ডিকেট করে পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে জনগণকে বাধ্য করার প্রতিবাদে এবং চামড়া সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে আজ ১৪ আগস্ট ২০১৯ বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন – সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ ঢাকা নগরের সদস্য সচিব জুলফিকার আলী, সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ঈদের আগে আলোচনা ছিল কত দামের গরু হাটে উঠেছে। ঈদের দিন দুপুর থেকে আলোচনা আর উদ্বেগ শুরু হয়েছে চামড়ার দাম নিয়ে। দেশের চামড়ার চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির পশুর চামড়া থেকে, এবছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতিবর্গফুট রাজধানী শহরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকার বাহিরে প্রতিবর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা । ছাগলের কাঁচা চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা। এই দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করেই। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখলাম প্রকৃত মূল্যের ৪ ভাগের ১ ভাগ দামে চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছে আর জনগণ এই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে তাদের কোরবানির পশুর চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ৭০ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হলো ৩০০ টাকায়, খাসির চামড়া বিক্রি হলো ১০ টাকায়। ৩১ বছর আগে ১৯৮৯ সালে ৭০০ টাকায় যে চামড়া বিক্রি হয়েছে এবার তার দাম ৩০০ টাকা। বগুড়ার ব্যবসায়ীরা বলেছে ৪০ বছরে এতো কম দামে চামড়া বিক্রি হয়নি। দাম না পেয়ে ক্ষোভে দুঃখে অনেক স্থানে চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছে। আমাদের দেশের বাণিজ্য মন্ত্রনালয় দাম নির্ধারণ করে দিয়ে তাঁদের দায়িত্ব শেষ করেছে। সাধারণ জনগণ যাতে নির্ধারিত দাম পায় সে ক্ষেত্রে তাদের বাজার তদারকির কোন ব্যবস্থা নাই। এবারে ঈদে ১০ কোটি বর্গফুট চামড়ায় জনগণ ৫০০ কোটি টাকা কম পেল। এই রকম হরিলুট ব্যবস্থায় আমাদের রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে, এখানে সিন্ডিকেটের কারণে কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পায়না, কোরবানির পশুর চামড়ার দাম জনগণ পায়না, সিন্ডিকেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ে। এমনকি ডেঙ্গু মশার ওষুধ ক্রয়ে দুই কোম্পানি সিন্ডিকেট করে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট করছে। আর্থিক ও ব্যাংক খাতে সিন্ডিকেটের লুটপাট চলছে। আর এসব সিন্ডিকেটের পাহারাদার এবং আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকার। বলা হচ্ছে সারা বিশ্বে চামড়ার দাম কমছে। আবার বলছে চামড়া যেন ভারতে পাচার না হয় সেজন্য বিজিবি সতর্ক আছে? একই সাথে ঘোষণা দিল সরকার যে কাঁচা চামড়া ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানি করা যাবে। এতে করে চামড়া ভারতে পাচার হবে।
অপরদিকে কতভাবে ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেতে পারে সরকার তার সকল আয়োজন নিশ্চিত করে। ব্যবসায়ীদের খেলাপী ঋণের সুদ মওকুফ করা হচ্ছে, ১০ বছরের জন্য অবলোপন করা হয় ঋণ। অপর দিকে কৃষকের মাত্র ৫০০ কোটি টাকা কৃষি ঋণের কারণে তাদের নামে সার্টিফিকেট মামলা দিয়ে কোমরে দড়ি দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। যেহেতু বর্তমান সরকার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে, ফলে জনগণের প্রতি সে কোন দায় অনুভব করছে না। তাই জনগণের রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি মাঝারি গরু থেকে কমপক্ষে ২০ বর্গফুট এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। সাধারণ হিসাবে দেখা যায় এক জোড়া জুতা তৈরি করতে ৪ বর্গফুট চামড়া লাগে। তাহলে চামড়ার দাম পড়ে ২০০ টাকা। চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ পড়ে প্রতি বর্গফুটে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। জুতা তৈরিতে শ্রমিকের মজুরিসহ সব খরচ হিসেব করলে এক জোড়া জুতা ৬০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাজারে মাঝারি মানের জুতাও তো ২০০০ টাকার কমে বিক্রি হয় না। গত ৬ বছরে ক্রমাগত চামড়ার দাম কমলেও জুতার দাম বেড়েই চলছে। দাম কমেছে চামড়ার অথচ দাম বাড়ছে জুতার এই হলো আমাদের দেশের ব্যাবসায়ী ও ব্যবসায়ী বান্ধব সরকার গুলির নীতি। তাই এই নীতি জনগণের পক্ষের নীতি হতে পারে না তাই এই নীতি পরিবর্তন দরকার। চামড়ার সিন্ডিকেটের শাস্তি দাবি করে নেতৃবৃন্দ জনগণের পক্ষের নীতি প্রণয়নের আন্দোলনে দেশবাসীকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান