07 Apr 2018
তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে তিন দিনব্যাপী রোডমার্চ-এর উদ্বোধনী সমাবেশে কমরেড খালেকুজ্জামান
ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সোচ্চার হউন

রোডমার্চের উদ্বোধনকালে কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, “নদীমাতৃক বাংলাদেশ আজ মরুকরণের হুমকীর মুখে। উজানে একতরফা পানি সরিয়ে নেয়ার ভারতীয় আগ্রাসী তৎপরতা ও দেশের ভিতরে সরকারের নতজানু, ভ্রান্তনীতি ও দখল-দুষনে ১২০০নদী কমে ২৩০ এ নেমে এসেছে এবং নদীর চেহারা খালে পরিণত হয়েছে। দেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তায় এবারে শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই পানি প্রবাহ আশংকাজনকভাবে কমে গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে যে সেচ সুবিধা প্রদান করা হত তা কমতে কমতে ইতিমধ্যে বন্ধ হওয়ার পথে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাবার কারণে বিকল্প সেচ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “শুধু তিস্তা নয় ভারত থেকে আগত ৫৪টি নদীতে ভারত এক তরফা বাঁধ দিয়ে সকল প্রকার আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লংঘন করে পানি প্রত্যাহার করছে। ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়ার কথা সকলের জানা আছে। সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীর উজানে বরাক নদীর টিপাই মুখে বাঁধ দিয়ে ভারত জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে কার্যত সুরমা-কুশিয়ারা তথা মেঘনা নদীকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আন্তঃনদী সংযোগের খড়্গ মাথায় ঝুলছে। ভারতের এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শষ্য শ্যামলা বাংলাদেশ অনিবার্য ভাবে মরুভূমির দেশে পরিণত হবে।”
তিনি আরো বলেন, “ভারতের শাসকগোষ্ঠী তাদের হীনস্বার্থে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে কখনো পানি সমস্যাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। কখনো সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার নামে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। একই ভাবে বর্তমান সরকারসহ অতীতের সকল সরকার নির্লজ্জভাবে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের প্রতি নতজানু থেকে কার্যত ভারতের আগ্রাসী পানি নীতিকে সমর্থন যুগিয়েছে। শাসক শ্রেণির একাংশ ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র এবং আরেকাংশ হিন্দু রাষ্ট্র বলে ভোটের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে চায়। ভারত একের পর এক নদীর পানি প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের সরকার কোন কার্যকর প্রতিবাদ-পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাসদসহ বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলসমূহের পক্ষ থেকে বার বার দাবি জানানো সত্বেও ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের কেউই কর্ণপাত করছে না। জোট-মহাজোটের ভোটের রাজনীতির কাছে দেশ, জনগণ, নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ কোন কিছুই গুরুত্ব পায় না।”
তিনি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার আর সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে সাইফুল হক বলেন, “শুধু তিস্তার পানিরই সমস্যা নয়, ফারাক্কার প্রভাবে গোটা উত্তরবঙ্গ মরুভূমি হওয়ার পথে। ভারতের সাথে পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ অভিন্ন ৫৪ নদীসহ ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদীর পানি বন্টনের সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এবং অভিন্ন নদীর পানি সমন্বিত ও যৌথ ব্যবস্থাপনা-ব্যবহার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং এ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চীন, ভারত, বাংলাদেশ, পেনপাল ও ভূটানের সাথে যৌথ অববাহিকা কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন।”
কাফী রতন বলেন, ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশে এসে সমঝোতা স্মারক করলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক কিছু নিয়ে গেলেন অথচ তিস্তাসহ পানির ন্যায্য হিস্যাদর চুক্তি করলেন না। কারণ আমাদের সরকার তো না চাইতেই সব দিয়ে দেয়ার জন্য বসে আছে। ফলে আমরা কিছুই আদায় করতে পারছি না।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ৮ এপ্রিল ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে ঢাকা আসবেন, এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা রয়েছে। এবারে তিস্তার পানি চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ অন্য, কিছু দেখতে চায় না। আর তিস্তা চুক্তি করতে না পারলে জনগণকে আন্দোলনের মাধ্যমেই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে এবং নতজানু সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “বাস্তবে ভারত বন্ধু বা হিন্দু নয় একটি সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র। ফলে সাম্রাজ্যবাদের চরিত্র অনুযায়ী ভারত পার্শ্ববর্তী দেশের উপর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামরিক-সাং স্কৃতিক কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করতে চায়। সেই জন্যই ভারতের বাতিল প্রকল্প বাংলাদেশে এনে সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র করার চক্রান্ত করছে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট ও বন্দর ব্যবহার করতে চায় অথচ তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি এবং মাত্র ৩০ কি.মি. করিডোর দিচ্ছে না নেপাল, ভূটানের সাথে যোগাযোগের জন্য। কেউ কেউ আবার ভারত বিরোধিতার নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে ফায়দা তুলতে চায়।”
