নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার বিচার ও সৌদি আরবসহ প্রবাসে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি
নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার বিচার ও সৌদি আরবসহ প্রবাসে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত
নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার বিচার এবং সৌদি আরবসহ প্রবাসে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সমাাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর উদ্যোগে আজ ২৯ নভেম্বর ২০১৯ সকাল ১০.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশোর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি দিপালী রানী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিলরুবা নূরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইসরাত জাহান লিপি, কোহিনূর আক্তার কণা, ঢাকা নগর শাখার সদস্য প্রীতিলতা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা নগর শাখার সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ।
বক্তাগণ বলেন, সারাদেশে নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দুই বছরের শিশুকন্যা বা ৬০ বছরের বৃদ্ধা যেকোন বয়সের নারী; হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান বা মুসলিম যেকোন ধর্মের নারী; পাহাড়ে বা সমতলে, ঘরে-পথে-স্কুলে-কারখানায় যেকোন স্থানে; দিনে বা রাতে যেকোন সময়ে বাংলাদেশে একজন নারী নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, অপহরণ, বন্দি করে রেখে গণধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন-হত্যা, বখাটেদের উৎপীড়ন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানি, ইন্টারনেটে ব্লাকমেইলসহ ঘরে বাইরে নানা উৎপীড়ন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যে উৎকণ্ঠার বাইরে কোনো নারীর পক্ষে স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বেড়ে উঠছে আমাদের কন্যা শিশুরা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ১হাজার ২৫৩জন নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৬শিশুর বয়স ছয় বছরের নিচে। এই শিশুদের কাউকে খেলতে গেলে, কাউকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে, কাউকে লিপিস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার কথা বলে ধর্ষণ করা হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কন্যা শিশুদের স্বাভাবিক শৈশব বলে আর কিছু নেই। সারাক্ষণ এক আশঙ্কা কন্যা শিশু এবং তাদের অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে। বিচারহীনতার রেওয়াজ, মাদক-পর্নোগ্রাফি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়া, মানবিক মূল্যবোধের ব্যাপকভাবে অবক্ষয় নারী-শিশু নির্যাতন পরিস্থিতিকে এই অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে সামাজিক ও গণপ্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিকদের দুঃসহ জীবন ও লাশ হয়ে দেশে ফেরার ঘটনা দেশবাসীকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। এবছর জানুয়ারি থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সাড়ে ৮মাসে ৮৫০জন নারী সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে আগস্ট মাসের ১ দিনেই ১০৯ জন ফিরেছেন। এদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরা প্রায় প্রত্যেকেই শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার।
সমাবেশ থেকে নেত্রীবৃন্দ প্রবাসে নারী শ্রমিক নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যার বিচার ও সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা, যেসকল নারীরা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রত্যেক পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, ফেরত আসা নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং ১০ বছরের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে বাংলাদেশের প্রান্তিক নারীদের শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান; যেন আর কোন নারীকে এমন অসহায় অবস্থায় পড়ে সৌদি আরবের (যে দেশে গৃহশ্রমিকদের দাসী ভাবা হয় এবং তাদের উপর যৌন নিপীড়ন জায়েজ মনে করা হয়) মতো কোন দেশে গৃহশ্রমিক হিসেবে যেতে না হয়।