প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ – চাল নয় ক্রয়কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ ধান কিনতে হবে
প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ
চাল নয় ক্রয়কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে ৪০/ ৪২ লাখ টন ধান কিনতে হবে সরকারকে
আগামী বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দ কর
প্রতি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১টি ক্রয়কেন্দ্র চালু করে খোদ উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে কমপক্ষে ৪০/ ৪২ লাখ টন বোরো ধান ক্রয়, করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে আগামী বাজেটে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দসহ কৃষক ক্ষেতমজুরদের বাঁচার ১১ দফা দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এর উদ্যোগে আজ ৭ মে ২০২০ সারাদেশে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন শেষে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ ঢাকা নগর সদস্য সচিব কমরেড জুলফিকার আলী, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক কমরেড আহসান হাবিব বুলবুল ও কমরেড খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারী আবারো দেখিয়ে দিল কৃষি-কৃষক, অর্থনীতি ও দেশ বাঁচাতে কৃষি খাতকে গুরুত্ব দেয়ার কোন বিকল্প নাই।
বিশেষ করে আমাদের দেশে যেখানে কৃষিতে মোট শ্রম শক্তির ৫৪% যুক্ত। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কোন না কোনভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল সেখানে কৃষিই পারে আমাদের অর্থনীতিকে বাঁচাতে। কিন্তু আমাদের দেশে শাসকশ্রেণি বরাবরই কৃষি খাতকে অবহেলা করে আসছে যার প্রকাশ চলতি সোয়া ৫ লক্ষ কোটি টাকা বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ মাত্র ৩.৫%।
বক্তারা বলেন, আমাদের বোরো ধান থেকে মোট খাদ্যের ৬০% আসে। তাই দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি বোরো মৌসুমে চাল নয় মোট উৎপাদনের কমপক্ষে ২০% বা ৪০/ ৪২ লাখ টন ধান খোদ উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করতে হবে। কারণ কৃষক চাল উৎপাদন করে না, সরকার চাল কিনলে লাভবান হয় মিল ও চাতাল মালিক ব্যবসায়ীরা। ধান ক্রয়ে দলীয়করণ ও দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ কৃষি, কৃষক বাঁচাতে আগামী বাজেটে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দ করা এবং কৃষি ভিত্তিক শিল্প নির্মাণ করারও দাবি জানান।
মনববন্ধন সমাবেশ শেষে কৃষক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে জুলফিকার আলী ও খালেকুজ্জামান লিপন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১১ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করেন।
দাবিসমূহ :
১. প্রতি ইউনিয়নে ক্রয় কেন্দ্র খুলে সরকার নির্ধারিত দামে উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে হবে।
২. ময়শ্চার বা ভেজা অজুহাতে কৃষকের ধান কেনা বন্ধ করা যাবে না; প্রয়োজনে খাদ্য গুদাম বা ক্রয়কেন্দ্রে ড্রায়ার মেশিনে ধান শুকিয়ে উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে।
৩. মোট উৎপাদিত বোরো ধানের কমপক্ষে ২০% অর্থাৎ ৪০/ ৪২ লাখ টন ধান সরকারি উদ্যোগে কিনতে হবে।
৪. খাদ্য গুদামে ধারন ক্ষমতা নাই এ অজুহাতে ধান কম কেনা যাবে না, পর্যাপ্ত খাদ্য গুদাম/ সাইলো নির্মাণ করতে হবে; আপদকালীন সময়ে বেসরকারি রাইস মিল বা চাতালের গুদাম ভাড়া নিতে হবে; এমনকি ধান কিনে কৃষকের বাড়িতেও রাখা যেতে পারে।
৫. করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ নয়, নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
৬. কৃষি ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজ সুদ মুক্ত করতে হবে; বর্গাচাষী, ভূমিহীন ও ক্ষুদ্র চাষীদের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে।
৭. ভূমিহীন, ক্ষেতমজুর ও ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা ও আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দের পরিমাণ ও সংখ্যা বাড়াতে হবে।
৮. দশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ সুদসহ মাফ করতে হবে। কৃষকের নামে দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করতে হবে। এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় ছয় মাস বন্ধ রাখতে হবে।
৯. করোনা বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনে আগামী বাজেটে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন বাজেটের ৪০% বরাদ্দ করতে হবে।
১০. সার, বীজ, সেচ, ডিজেল, বিদ্যুৎ, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণে সরকারি সহায়তা আরও বাড়াতে হবে।
১১. ত্রাণের চাল-ডাল-তেল চুরি, দুর্নীতি, দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে; চোরদের শুধু বরখাস্ত নয় গ্রেপ্তার, বিচার ও তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
বগুড়া জেলা সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এর উদ্যোগে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি


















