‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট – উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হল-এ
‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট – উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা

Ibrahim Khaledবাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট – উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় তলায় জহুর হোসেন চৌধুরী হল-এ জোটের সমন্বয়ক বাসদ নেতা কমরেড বজলুর রশীয় ফিরোজের সভাপতিত্বে ও সিপিবি নেতা আব্দুল্লা হিল কাফী রতনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন, সিপিবির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর জনাব ইব্রাহিম খালেদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক এম.এম আকাশ, ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি ক্রিসেল এর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাফ্ফর আহমেদ এফসিএ, অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক ইকবার কবীর জাহিদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা।
Mujnahidul Islam Selimমুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকার অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দিয়ে উন্নয়নের গল্প তৈরি করছে কিন্তু এই পরিসংখ্যানে একটা মিথ্যা লুকিয়ে আছে, যা দিয়ে সত্যকে আড়াল করা হয়। ব্যাংক ব্যবসা এখন খুবই লাভজনক তার চেয়ে বেশি লাভজনক হচ্ছে এমপিগিরি ও রাজনৈতিক ব্যবসা। বাজার অর্থনীতি রাজনীতিকে বাজারনীতিতে পরিণত করেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষের অর্থনীতি ভালো আছে এরকম মিথ্যা তথ্যা যারা প্রচার করছে তাদের সাজা হওয়া দরকার। সম্পদ পাচার থেকে দেশকে বাঁচাতে আমরা ’৭১ সালে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছি সেটা ছিল ন্যায় সঙ্গত আর এখন বাংগালী যারা অর্থ পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করলে কেন তা ন্যয়সঙ্গত হবে না।
Khalequzzamanকমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, আমাদের সংবিধান অনুসারে আমাদের অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয়, সমবায় ও ব্যক্তি এই তিন ধরনের মালিকানা থাকার কথা আছে, তার মধ্যে ব্যক্তি মালিকানা হচ্ছে সবার শেষে তিন নম্বরে কিন্তু এখন শুধুমাত্র ব্যক্তিমালিনা তথা পাঁচাভাগ লুটেরাদের মালিকানা বজায় রেখে বাকি মালিকানা প্রায় বিলুপ্ত করা হয়েছে। এই নীতি আমাদের সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রাষ্ট্রের কোন প্রতিষ্ঠানই এখন আর সাধারণ জনগেণের কল্যাণে কাজ করে না তাই এই রাষ্ট্র তার জন্মকালীন ঘোষণার বিপরীতে চলে তার টিকে থাকার যৌক্তিকতা হরিয়েছে। তিনি বলেন, তাই রাষ্ট্র ব্যবস্থা পাল্টানো ছাড়া অর্থব্যবস্থার সংকট দূর করা যাবে না।
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, গড় আয় দিয়ে জনণের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ধারণ করা একটা প্রতারণামূলক প্রক্রিয়া। এর মধ্যদিয়ে জনগণের বাস্তব অবস্থা আড়াল করা হয়। ভারতের করযোগ্য আয়ের নি¤œ সীমা যেখানে ৬ লাখ টাকা আর আদায়কৃত করের পরিমাণ জিডিপির ২০ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশে করযোগ্য আয়ের নি¤œসীমা আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে আর আদায় কৃত করের পরিমাণ জিডিপির ১০ শতাংশ মাত্র। এর মানে বাংলাদেশের করযোগ্য হিসেবে যাদের নির্ধারন করা হয়েছে সেই ধনিরা কর দেয় না, কর দেয় গরীবেরা।
সরকার লুটপাটকারীদের ৯% সুদে ঋণ দিতে আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়েছে। দেশে যে উন্নয়ন হয় তার সুফল ভোগ করে ৫ ভাগ ধনীরা, সাধারণ জনগণের জন্য কোন উন্নয়ন হয় না। বাংলাদেশে ধনী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৯% যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ধনী বাড়ার হার বাড়লে গরিব বাড়ার হারও বাড়ে। অর্থনীতি আয় বৈষম্য এত বেশি যা এশিয়ার অনেক দেশ এর ধারে কাছেও নেই। সংবিধানে মুুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় ছিল সাম্য প্রতিষ্ঠার। ফলে এই বৈষম্য আমাদের সংবিধান বিরোধী। তার মানে এই সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করে দেশ পরিচালনা করছে।
Anu Mohammadঅধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই তিনের মেলবন্ধনেই খেলাপিঋণের নষ্ট সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছে। এখন দেশের উন্নয়নের নীতিই হচ্ছে লুটপাট। আমাদের দেশের মন্ত্রীরা বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার কারণ হচ্ছে, এরা এখান থেকে লুটপাট করে, অর্থ-সম্পদ পাচার করে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে ভালো রেখেছে। এই কারণে দেশের ব্যাংক-বিমা অর্থখাত ধ্বংসকারী অর্থমন্ত্রী এক নম্বর অর্থমন্ত্রীর স্বীকৃতি পায়। সুন্দরবন তথা পরিবেশ ধ্বংস করে প্রধানমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ান অফ দা আর্থ এর পুরষ্কার পায়।
অ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, আমাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ জুন ’১৯ পর্যন্ত ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। অর্থনীতির আয়তন অনুপাতে যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ রিসিডিউল না করলে এর আকার দাঁড়াতো দ্বিগুণ। সরকার ঋণখোলাপিদের শাস্তি না দিয়ে কনশেসন দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে এর ফলে খেলাপি ঋণ না কমে ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি বলেন, এক অঙ্কের সুদের হারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমানতকারী, সুবিধা পাবে লুটেরা ধনি, ব্যাংক ডাকাত ও ঋণখেলাপিরা।
মোজাফ্ফর আহমেদ এফসিএ বলেন, বাংকের মোট টাকার মধ্যে পরিচালকদের হচ্ছে মাত্র ৫% আর আমানতকারীদের হচ্ছে ৯৫% কিন্তু সকল সুবিধা নিচ্ছে ও কর্তৃত্ব করছে ওই ৫%-এর মালিক পরিচালকরা। তারা গোটা ব্যাংকের মালিক সেজে বসে আছে। এটা কোনভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না, এটা মানা যায় না। এই বিষয়ে রাজনীতিকদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমাতে হবে।
অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, অর্থিকখাতের টালমাটাল অবস্থায়ও কেন নতুন ব্যাংক হচ্ছে? কারণ ব্যাংকে যে পরিমাণ লাভ হয় অন্য কোন খাতে এই পরিমাণ লাভ হয় না। গড় হিসেবে ব্যাংক খাতের লাভ ২০০% থেকে ৩০০% পর্যন্ত। সরকার ক্রেতা সেজে লুটপাটকারীদের রক্ষা করে চলছে। এই নীতি চলতে থাকলে এই অরাজকতা থেকে আর্থিক খাতকে রক্ষা করা যাবে না।
DSC_0141বাম জোটের সমন্বয়ক ও আলোচনা সভার সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংকট লুটপাটের রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্থা থেকেই উৎসারিত। ফলে আর্থিক খাতের সংকট কাটাতে হলে রাষ্ট্র শাসন, প্রশাসন ব্যবস্থা পাল্টাতে হবে। বাম গণতান্ত্রিক জোট ব্যবস্থা পাল্টানোর সেই সংগ্রাম করছে। তিনি ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিময়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের সকল বাম প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলোচনা শেষে সভাপতি ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধের দাবিতে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঐদিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক অভিমুখে ঘেরাও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
Audianceআলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড শাহ আলম, মোশাররফ হোসেন নান্নু, রাজেকুজ্জামান রতন, রুহীন হোসেন প্রিন্স, জোনায়েদ সাকি, মানস নন্দী, মোশরেফা মিশু, হামিদুল হক, আকবর খান, সাজ্জাদ জহির চন্দন, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, মনিরউদ্দিন পাপ্পু, ফখরুদ্দিন কবীর আতিক, জুলফিকা আলী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

আলোচনা সভার সূচনা বক্তব্যের কপি সংযুক্ত করা হলো

‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট – উত্তরণের পথ’
শীর্ষক আলোচনা সভা
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, সকাল ১০:৩০ মি., জহুর হোসেন চৌধুরী হল (দ্বিতীয় তলা), জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা

আজকের আলোচনা সভার শ্রদ্ধেয় আলোচকবৃন্দ, বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ ও সংগ্রামী উপস্থিতি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

বন্ধুগণ,
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণানুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে গত ১২ বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৯৩ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ার বাজারে নীতি নির্ধারকদের দ্বারা লুটপাট সংগঠিত হয়েছিল। ২০১০ সালেও একই সরকারের আশ্রিত ব্যবসায়ী নেতাদের নেতৃত্বে শেয়ার বাজার লুটপাট সংগঠিত হয়েছে।
দেশের আর্থিক খাত ও পুঁজিবাজারে যে সংকট বিরাজ করছে তার উৎস হচ্ছে দেশের জবাবদিহীতাহীন, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, লুটপাটের শাসন ব্যবস্থা ও মুক্তবাজারী অর্থনীতি, মন্ত্রী, আমলা, সাংসদ, ব্যাংকারদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও শাসক দলের আশ্রিত ব্যবসায়ী লুটেরা ধনিকদের লুটপাট। এই প্রেক্ষিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট – উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আজকের এই আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বিভিন্ন পর্যায় ও স্তর থেকে ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে আমাদের আমন্ত্রিত বিশিষ্ট ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, আইন বিশেষজ্ঞ আলোচকরা যেভাবে অবলোকন করছেন তা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন।
আজকের আলোচনা সভার উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞদের চিন্তার সাথে মাঠে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষের চিন্তার সমন্বয় সাধন করে দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক ডাকাত লুটেরা গোষ্ঠীর কবল থেকে দেশের ব্যাংকসহ আর্থিক খাত ও পুঁজি বাজারকে উদ্ধার করা।

প্রিয় উপস্থিতি
বর্তমান অর্থমন্ত্রীর সংসদে দেয়া বক্তব্য অনুযায়ী ১৯৯১ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুন মাসে ৯ লাখ ৩২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণের মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ছিল।
বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম ‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে উল্টোপাল্টা পদক্ষেপ বন্ধ করুন, ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করুন’ প্রবন্ধে হিসেব করে দেছিয়েছেন খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব চাতুরিপূর্ণ। তার মতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১,১২,৪২৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের সাথে যুক্ত হবে আদালতের ইনজাংশনের কারণে ঝুলে থাকা ৭৯,২৪২ কোটি টাকা, স্পেশাল মেনসন একাউন্টের ২৭,১৯২ কোটি টাকা এবং নিয়মবহির্ভূত রিসিডিউলিং করা ২১,৩০৮ কোটি টাকা। সর্ব সাকুল্যে ২,৪০,১৬৭ কোটি টাকা। এর সাথে রাইট অফ করা মন্দ ঋণ ৫৪,৪৬৩ কোটি টাকা যোগ করে হয় ২,৯৪,৬৩০ কোটি টাকা। ৩০ জুন ২০১৯ সালে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৬২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার বিপরীতে অধ্যাপক মইনুল হোসেনের হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২,৯৪,৬৩০ কোটি টাকা যা মোট ঋণের ৩০.৬২%।
এ বিশাল খেলাপি ঋণের জন্যে দায়ি সরকারের গণবিরোধী আর্থিক নীতি, সরকার ও ব্যাংক প্রশাসনের অদক্ষতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, জবাবদিহীহীনতা এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা লুটেরা ধনিক গোষ্ঠী যারা ‘আদি পুঁজি সঞ্চয়ের’ নামে সরকারের সহযোগিতায় সকল নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস, প্রকল্প ব্যয় অতিরিক্ত দেখিয়ে ব্যাংক থেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আবার অনেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে হুন্ডি করে দেশ থেকে টাকা পাচার করে চলেছে। সরকারের ছত্রছায়ায় এভাবে লুটেরা ধনিকরা ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে পাচারকৃত আরাফাত রহমান কোকোর টাকা যখন ফেরত আনা হলো তখন দেশবাসী আশ্বস্ত হয়ে মনে করেছিল যাক, এবার বুঝি দেশ থেকে পাচারকৃত সকল অর্থ ফেরত আনা হবে। কিন্তু হায়! সে আশায় গুড়ে বালি। ওটা ওখানেই থেমে আছে কোন এক অদৃশ্য কারণে।
এখানে উপস্থিত আছেন যারা তারা অনেকেই জানেন আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাদের তথাকথিত ‘দিন বদলে’র কর্মসূচির অন্যতম রচয়িতা একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল। রাজনৈতিক চাপে বা অন্য যে কোন কারণে হোক সেসময় বেসরকারি ব্যাংকসমূহে মন্দ ও খেলাপি হয়ে যাওয়া ঋণের অনেক গুলোই সেই ব্যাংক টেকওভার করেছিল। বর্তমানে সেই ঋণ পুনরায় মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। যার পরিমাণ সাড়ে ৪/৫ হাজার কোটি টাকার নীচে হবে না। এটা ব্যাংক প্রশাসনের জবাবদিহীহীনতা ও অদক্ষতারও পরিচয় বহন করে।
ওয়াকিবহাল মহল জানেন পাবলিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ পেতে গেলে পরিচালক, ব্যাংকার সিন্ডিকেটকে ঋণের ৭% থেকে ১০% টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সংখ্যায় সম্পাদক নঈম নিজাম এক সাংসদকে উদ্ধৃত করে স্বনামে উপসম্পাদকীয় লিখেছেন, এমপি সাহেব কোন একটা ব্যাংক থেকে ২০ কোটি টাকার ঋণ চাইতে গেলে তাকে ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এমপি সাহেব তার সহজামানতের সীমাবদ্ধতার কথা জানালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০ কোটি টাকার বিপরীতে দেয়া সহজামানতের ডকুমেন্টকে ২০০ কোটি টাকা ঋণের উপযুক্ত করে দেয়ার কথা বলেন। ব্যাংক চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘কাগজপত্র নিয়ে চিন্তা নেই। প্রয়োজনে অন্য নামে নিন। আপনার নামেও নেয়ার দরকার নেই। দরকার হলে কাগজপত্র আমরা বানিয়ে নেব। তবে আমাদের একটা প্রস্তাব শুধু শুনতে হবে। ১০% দিয়ে দিতে হবে। হংকং চলে যাবে এই ১০%। আপনার টাকা দেশে রাখবেন না বিদেশে পাঠাবেন সেটা আপনার বিষয়।’
এ হচ্ছে সরকারের নিযুক্ত চেয়ারম্যান সাহেবের চরিত্র আর মেরুদন্ডহীন বশংবদ ব্যাংক কর্মকর্তার লুটপাটে সহায়তা করার চিত্র। জনাব নঈম নিজাম কোন ব্যাংক, কোন সাংসদ, কোন চেয়ারম্যানের কথা বলেছেন আমরা জানিনা। তবে এমন চেয়ারম্যান কি আমরা দেখিনি। এ সরকার আমলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু দানছত্র খুলে ৪/৫ হাজার কোটি টাকা দলীয় স্বজনদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন। যার পুরোটাই খেলাপি হয়ে গেছে। বেসিক ব্যাংকের শক্তিশালী অবস্থান নষ্ট করে দিয়েছেন রাজনৈতিক ও আত্মীয়তার বিবেচনায় নিযুক্ত হওয়া ব্যক্তিটি। সোনালী ব্যাংকের সরকার মনোনীত আওয়ামী লীগ নেতা পরিচালকদের সহযোগিতায় হলমার্ক নামক একটা কোম্পানি ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর দায়িত্ব কার? এর দায়িত্ব নিতে হবে সরকার, অর্থমন্ত্রণালয়, নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের।
হলমার্ক কেলেংকারির সময় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, ৪ হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই নয়। পরবর্তীতে সংসদে ও অন্যত্র আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে অর্থহীন বিষোদগারও করেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী। সাম্প্রতিককালে সেই অসৎ লুটেরা চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়েছে দুদক চেয়ারম্যান। এ দেখা যাচ্ছে সর্ষের মধ্যেই ভূত। এছাড়াও এই সরকারের আমলেই বিসমিল্লাহ, ক্রিসেন্ট, এননটেক্স প্রভৃতি আর্থিক কেলেংকারিসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে এক বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যাওয়ার কথা দেশবাসী জানে।

প্রিয় উপস্থিতি
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে দুইবার লুটপাট সংগঠিত হয়েছে। দুই বারই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজার লুটপাটের সাথে জড়িত ছিল সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ২০১০ সালের লুটপাটের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছিল আওয়ামী সরকার ও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী। সমগ্র ২০১০ সাল জুড়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয়েছে দেশের আর্থিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন পুঁজিবাজারকে সম্প্রসারিত করা। সে কারণে আর্থিক খাত থেকে অর্থ পুঁজিবাজারে স্থানান্তরে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় রোড শো করা হয়। জেলায়, উপজেলায় ব্রোকার হাউজের শাখা খোলার অনুমতি দেয়া হয়। সরকার ব্যাংক আমানতের সুদ কমিয়ে দিয়েছিল। সঞ্চয়পত্রের সুদ ব্যাপক হারে কমিয়ে দিয়েছিল। একদিকে সরকারি প্রচারণা অন্যদিকে ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের সুদ কমে যাওয়া, পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক অবস্থায় অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের ঘটনায় শেয়ার বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারনা ছাড়াই তরুণ-যুবকসহ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিল। বছর শেষ না হতেই ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এক দল দুর্বৃত্ত পাশের দেশের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় হাজার হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজার থেকে লুটে নেয়। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট আজও জনসম্মুক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। দোষীদের শাস্তি তো দূরের কথা। পুঁজিবাজারে একদল লোক সর্বস্বান্ত হলেন, গুটি কয়েক মানুষ ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধামন্ত্রীর বর্তমান উপদেষ্টা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা সালমান রহমান সাহেব। তিনি পুঁজিবাজারের অন্যতম খেলোয়াড় ছিলেন। পুঁজিবাজারের টাকা দিয়েই নাকি তিনি তার সে সময়ের সব খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। ২০১০ সালের পর পুঁজিবাজার আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

প্রিয় উপস্থিতি
এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের আর্থিক ও পুঁজিবাজারের বর্তমান হালচাল। বর্তমান সরকার এবার ক্ষমতায় আসার পর ব্যবসায়ীদের মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়েছে। অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, উপদেষ্টা সবই ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর যে নীতিসমূহ নিয়েছেন সেগুলো দেশের আর্থিক খাত ও ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাত কোনটাই ভাল নেই।
১) অর্থমন্ত্রী আ. হ. ম. মোস্তফা কামাল সাহেব চেয়ারে বসেই খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান সার্কুলার পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। ঋণের শ্রেণিকরণের সংজ্ঞা ও মেয়াদ পরিবর্তন করে দেন। (ক) পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের তিন মাস পর যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হত সেগুলোকে ‘সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণ’ শ্রেণিকরণ করা হতো, নূতন নিয়মে তিন মাসের পরিবর্তে সময়টা ছয় মাস করা হয়েছে; (খ) পূর্বে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছয় মাসের বেশি যেসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হত সেগুলোকে ‘ডাউটফুল ঋণ’ বলা হত, নূতন নিয়মে নয় মাস মেয়াদোত্তীর্ণ হলে ‘ডাউটফুল’ শ্রেণিকরণ হবে; এবং (গ) আগের নিয়মে নয় মাসের বেশি কোনো ঋণ খেলাপি হলে ‘মন্দঋণ’ শ্রেণিকরণ করা হতো, এখন এক বছর বা তার বেশি সময়ের জন্যে ঋণ অনাদায়ী হলে ‘মন্দঋণ’ বা ‘লস’ শ্রেণিকরণ করা হবে।
২) আগে পাঁচ বছরের খেলাপি মন্দ ঋণ রাইট অফ করার যোগ্য বিবেচিত হতো। বর্তমানে ২/৩ বছর হলেই রাইট অফ করার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে।
৩) মাত্র ২% খেলাপি ঋণ প্রথম কিস্তিতে শোধ করলে ঋণ খেলাপিকে ১০ বছর সময় দেয়া হবে। যার মধ্যে তিন মাসের কিস্তিতে মাত্র ৯% সুদে বাকি ঋণ শোধ করা যাবে।
৪) অর্থমন্ত্রী সংসদকে জানিয়েছেন, বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি আইন কার্যকর করার মাধ্যমে ঋণ খেলাপিদেরকে মাফ করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
৫) পরিবারতন্ত্রের স্বার্থে ব্যাংকিং আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী ব্যাংক পরিচালনা পরিষদে এক পরিবার থেকে দুই জনের পরিবর্তে চার জনকে নিযুক্ত করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। একজন পরিচালক একাধিক্রমে ৬ বছরের পরিবর্তে একাধিক্রমে ৯ বছর পরিচালক থাকার বিধান রাখা হয়েছে।
৬) বর্তমানে একই পরিবারের মালিকানায় রয়েছে ৮টি বেসরকারি ব্যাংক। ব্যাংকসমূহের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হয়েছে।
৭) অর্থমন্ত্রী সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের বিল সংসদে পাস করেন। বাপেক্স, পেট্রোবাংলা, বিপিসি, ধান গবেষণাসহ ৬১টি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি তহবিলে স্থানান্তর করা হবে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হবে এবং সব প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ যা ব্যাংকসমূহে জমা রয়েছে তা যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয় তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ তারল্য সংকটে পড়বে।

প্রিয় উপস্থিতি
ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা নি¤œলিখিত সুপারিশসমূহ তুলে ধরছি :-
১. খেলাপি ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ঋণ খেলাপিকে চূড়ান্ত বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
২. ব্যাংকারদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগসমূহ নিস্পত্তির জন্য ব্যাংক খাতের জন্য স্বতন্ত্র ‘ন্যায়পাল’ (ঙসনঁফংসধহ) নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. মন্দঋণ আদায়ের জন্য ‘ডেট রিকভারী এজেন্সি’ বা ‘এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’ গঠন করতে হবে।
৪. অর্থ ঋণ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে কোন ঋণ খেলাপির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় হলে সহজামানত নিলাম করার জন্য পুনরায় মামলা করার নিয়ম বাতিল করে সরাসরি নিলাম করার বিধান চালু করতে হবে।
৫. খেলাপিদের কথিত ভিআইপি/ সিআইপি মর্যাদা বাতিল করতে হবে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে তাদেরকে আমন্ত্রণ করা যাবে না। কোন পর্যায়ের নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। প্রতিমাসে গণমাধ্যমে ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
৬. বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাতিল করতে হবে।
৭. একীভবন (গধৎমবৎ)-এর মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে এনে কর্মিদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে গতিশীল করতে হবে।
৮. পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহে উৎসাহী করতে হবে।
৯. ব্যাংক পরিচালকদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে হবে।
১০. ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা, গতিশীলতা নিশ্চিত করতে ‘স্বাধীন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
১১. বিদেশে পাচারকৃত সকল সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সাংবিধানিক অঙ্গীকার অনুযায়ী আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
১২. দলীয় বিবেচনায় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ প্রদান করা যাবে না। ব্যাংকিং খাতে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের পরিচালনা পরিষদের নিয়োগ দিতে হবে।

বন্ধুগণ,
বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাত এক পরিকল্পিত নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে চলছে। রাজনীতিকে উপরি কাঠামো হিসেবে দেখা যায় কিন্তু যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না অথচ যার প্রভাব ব্যাপক ও বিস্তৃত তা হল অর্থনীতি। তাই বলা হয় অর্থনীতি হচ্ছে রাষ্ট্র ও সমাজের ভিত্তি। এই অর্থনীতিতে ঝাঁকুনি লাগলে তার প্রভাব রাজনীতিতে পড়ে ব্যাপকভাবে। অর্থনীতিতে লুণ্ঠন আর রাজনীতিতে দুর্বৃত্তপনা দেখতে দেখতে কেউ কেউ ভাবছেন এর কি কোন শেষ নেই? কিন্তু আমরা জানি যে কোন কিছুর শেষ করতে হলেও তো শুরু করতে হয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে যে কাঠামোগত দুর্বলতা ও দুর্নীতির মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে এবং ক্রমাগত বাড়ছে সেখান থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নাই। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই আন্দোলন গড়ে তুলি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা দেশকে রক্ষা করি। ধৈর্য্য ধরে শোনার জন্য সবাইকে পুনরায় ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছান্তে

বজলুর রশীদ ফিরোজ
সমন্বয়ক
বাম গণতান্ত্রি জোট
কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ

Translate »