মহান শিক্ষা দিবসে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আন্তর্জাতিক শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিরোধ দিবস পালন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বিরোধী মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত
১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবসে আজ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে পালিত হয়েছে ‘আর্ন্তজাতিক শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিরোধ দিবস’। দেশে দেশে শিক্ষাকে বাজারী পণ্যে পরিণত করার যে আয়োজন চলছে তা প্রতিরোধেই এই দিবস পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মাানী, ইকুয়েডর, ফিলিপাইন সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই শিক্ষা বাণিজ্য প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে। আজ সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে জমায়েত হয়ে সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু। পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাবিব রুমন। আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স, অর্থ সম্পাদক রুখসানা আফরোজ আশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সভাপতি মাসুক হেলাল অনিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এম এম মুজাহিদ অনিক, ইডেন কলেজ শাখার সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক সজল বাড়ৈ, ঢাকা পলিটেকনিক শাখার নেতা রাজিবুর রহমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক শামীমা আক্তার ঝুমু।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে আকাঙ্খা নিয়ে ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্ররা শরীফ কমিশনের শিক্ষা সংকোচন নীতিকে প্রতিহত করেছিল আজও শাসক শ্রেণীর কন্ঠে তার আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে। পাকিস্তানী শাসকশ্রেণীর পরিবর্তে বাংলাদেশী শাসকরা ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু শাসকদের নীতির বদল হয়নি। শিক্ষা খাতে ক্রমাগত বরাদ্দকৃত বাজেট কমছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বত্রই সরকার শিক্ষার আয়োজনের দায়িত্ব পালন করছে না। বরং শিক্ষার বেসরকারীকরণের প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করছে। সরকারি উদ্যোগে নতুন স্কুল কলেজ নির্মিত হচ্ছে না। বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চহারে ফি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে। এর ফলে সমাজের মুষ্টিমেয় ধনীক গোষ্ঠী শিক্ষা পাচ্ছে কিন্তু দেশের বিশাল অংশের সাধারণ মানুষ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চলতে হবে নিজস্ব আয়ে শাসকদের এই নীতির ফলে ক্রমাগত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফি বৃদ্ধি হচ্ছে, বাণিজ্যিক কোর্স চালু করা হচ্ছে। গবেষণা খাতে কোন বরাদ্দ থাকছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরও নাজুক। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে সরা বছর ক্লাস হয়না, শিক্ষ নেই, পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। আর সর্বশেষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাট আরোপের ঘটনা শাসকদের পণ্য মানসিকতার উৎকট প্রকাশ। যদিও লড়াকু ছাত্র সমাজের প্রতিরোধের কারণে সেই ভ্যাট প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শিক্ষা দিবসের চেতনা তাই আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সারা দুনিয়া জুড়েই শিক্ষার উপর পুঁজির যে আগ্রাসন চলছে তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শিক্ষা দিবসের চেতনা অনুপ্রেরণার উৎস। ধনী-গরিব বৈষম্যহীন সবার জন্য শিক্ষার লড়াইয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট তার লড়াই অব্যাহত রাখবে।
পরে একটি সুসজ্জিত মিছিল ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।