সরকারের উদ্যোগকে বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন না বলে বাল্য বিয়ে উৎসাহিতকরণ আইন বলা উচিত-সৈয়দ আবুল মকসুদ
‘শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের বয়স ১৬; নারীর স্বাধীন বিকাশের পথে নতুন প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক
মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
সরকারের উদ্যোগকে বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন না বলে বাল্য বিয়ে উৎসাহিতকরণ আইন বলা উচিত-সৈয়দ আবুল মকসুদ
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর উদ্যোগে আজ ২১ মার্চ ২০১৫ শনিবার সকাল ১১টায় ‘শর্ত সাপেক্ষে বিয়ের বয়স ১৬; নারীর স্বাধীন বিকাশের পথে নতুন প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা সেগুন বাগিচায় অবস্থিত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তন (নিচতলা) এ অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশো। আলোচনা করেন বিশিষ্ট কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ, শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক সোহরাব হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ, সমাজতানিআত্রক মহিলা ফোরাম এর উপদেষ্টা শামসুন্নাহার জ্যোৎ¯œা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি জনার্দন দত্ত নান্টু। প্রারম্ভিক বক্তব্য পাঠ এবং সভা পরিচালনা করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু।
বিশিষ্ট কলাম লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দারিদ্র, যৌতুক, নিরাপত্তাহীনতা, অসচেতনতা, অশিক্ষা, কুসংস্কার ইত্যাদি যে সকল কারণে বাল্য বিয়ের হার বেশি সেগুলো দূর করার কোন বিশেষ উদ্যোগ না নিয়ে আইন করা হচ্ছে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স কমানোর। এই আইন হলে যুগ যুগ ধরে এর কুপ্রভাব আমাদের সমাজে থাকবে। ফলে সরকারের উদ্যোগকে ‘বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন’ না বলে ‘বাল্য বিয়ে উৎসাহিতকরণ আইন’ বলা উচিত।
শিক্ষাবার্তার সম্পাদক এ এন রাশেদা বলেন, সম্পত্তির উত্তারধিকারে সমান অধিকার দেওয়া হচ্ছে না। সিডও সনদের ২টি ধারা এখনো সরকার অনুমোদন দেয়নি। নারীদের সামনে এগিয়ে যাবার আইন না করে পিছিয়ে দেবার আইন করা হচ্ছে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, ভুত নাকি উল্টা পায়ে হাটে। আমাদের দেশও কি উল্টা দিকে যাবে? আমাদের মেয়েদেরকে কি আমরা সেই বেগম রোকেয়ার সময়ের অবরোধের দিকে ঠেলে দিব?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসীন বলেন, ভোট আর ক্ষমতা দখলের রাজনীতির কারণেই এই আইন। পরিসংখানে বাল্য বিবাহ কম দেখানোর জন্য সরকার এই আইন করছে। যার ফলাফল হবে ভয়াবহ।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক সোহরাব হোসেন বলেন, আইনের শর্ত হচ্ছে বাবা-মার সম্মতি, তার মানে মেয়ের অমতে এবং জোরপূর্বকও তাকে বিয়ে দেওয়া আইনসম্মত বলে গণ্য হবে। আবার বিয়ের এই বয়স জাতিসংঘ ঘোষিত আর্ন্তজাতিক শিশু অধিকার সনদেরও লঙ্ঘন। ১৮ বছরের আগে সে ভোট দিতে পারবে না, তার নিজেস্ব ব্যাংক এ্যকাউন্ট থাকবে না, সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারবে না, ফলে একজন অসহায় শিশুকে এই আইনের মাধ্যমে কোথায় ঠেলে দেওয়া হবে?
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, সরকার পরিসংখ্যানের রাজনীতি করে। এসএসসি-জেএসসিতে কত জিপিএ ৫ হলো এই দেখাতে ব্যস্ত। তেমনি বাল্য বিয়ের হারও কম দেখাতে এই আইন।
সভাপতি রওশন আরা রুশো বলেন, মতবিনিময় সভার মাধ্যমে বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা হলো। সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর পক্ষ থেকে আমরা সকল প্রগতিশীল নারী-পুরুষকে আহ্বান জানাই নারী সমাজকে পিছিয়ে দেবার এই আইন রুখে দেবার আন্দোলনে শামিল হতে।
মতবিনিময় সভায় আলোচকবৃন্দ বিয়ের বয়স কমানোর সরকারি পায়তারা বন্ধ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নারী অ্িযধকার বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভা থেকে বিয়ের বয়স কমানোর প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সকল নারী সংগঠন বাম প্রতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিশিষ্টব্যক্তি গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। একইভাবে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।