সিলেটে ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ নামে চা-শ্রমিকদের ভূমি দখলের চক্রান্ত চলছে: সিপিবি-বাসদ
সিলেটের চান্দপুর ও বেগমখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে চা-শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত ভূমি দখলের চক্রান্ত চলছে। দেড়’শ বছর ধরে যে অনাবাদি জমিকে ফসলী জমিতে পরিণত করেছে চা-শ্রমিকরা বংশ পরম্পরায়, তা জোর করে দখলের চক্রান্ত করছে একটি মহল। ক্ষমতাসীন বিভিন্ন লুটেরার নজর থেকে এই জমি ও ফসল রক্ষার দাবিতে জোর আন্দোলন চালাচ্ছে সে অঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমিক।
সেখানকার পরিস্থিতি, আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আজ সকাল ১১টায় পল্টনের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনে ‘স্পেশাল ইকোনোমিক জোন-এর নামে চা-শ্রমিকদের উচ্ছেদ, প্রকৃতি এবং পরিবেশ কার স্বার্থে’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) এর উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিপিবির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আলোচনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামন, তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ, সাংবাদিক-কলামিস্ট আবু সাঈদ খান, বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন নাইডু প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতেই চান্দপুর ও বেগমখান অঞ্চলে চা-শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সিপিবি-বাসদের মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন। এরপর সিপিবি-বাসদ প্রতিনিধি দলের পক্ষে সেখানকার পরিস্থিতি ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন সিপিবি নেতা জলি তালুকদার।
বক্তারা বলেন, কেবল চুনারুঘাটেই খাস জমি ও পতিত জমির পরিমাণ চা-শ্রমিকদের দো-ফসলী ৫১১ একরের চেয়ে ১০-১৫ গুণ বেশি। তারপরও চা-শ্রমিকদের এই জমির দিকে নজর দেয়ার একটাই কারণ হতে পারে, তা হলো, অনুন্নত জনগোষ্ঠী বিবেচনায় এই জমি সহজে দখল করা সম্ভব।
আলোচনায় আবু সাঈদ খান বলেন, চা-শ্রমিকদের আন্দোলন প্রমাণ করে, কৃষিজমি রক্ষায় সরকারের ঘোষণা আসলে ‘কথার কথা’। তিনি বলেন, বাম-প্রগতিশীলরা কখনওই উন্নয়নের বিরোধী নয়, তারা মানুষের ভূমি এবং ফসল রক্ষায় তৎপর।
আবু সাঈদ চা-শ্রমিকদের আবাদ করা জমি বাদ দিয়ে অন্য খাসজমি ও পতিত ভূমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার আহবান জানান।আনু মুহাম্মদ সরকারের ‘উন্নয়নের নামে ভাওতাবাজির সমালোচনা করে বলেন, জমি দখল করতে দু-ফসলী জমিকে ‘অকৃষি’ দেখানো হয়েছে, যেন, দখলও বজায় থাকে, আবার আইনও না ভাঙে।
তিনি বলেন, চা-শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলন মেনে নিয়ে সরকারের উচিত ওই অঞ্চল ঘিরে অর্থনৈতিক জোন বানানোর আত্মঘাতি পরিকল্পনা বাদ দেওয়া।
চা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন নাইডু বলেন, চা-শ্রমিকরা বংশ পরম্পরায় বুকের রক্ত পানি করে এই জমিকে ফসলী জমিতে রূপান্তর করেছে। দৈনিক ৬৯ টাকা মজুরির পরও তারা বেঁচে আছে ওই জমিতে চাষ-বাস করে।
এখন ওই জমি দখলের মানে হচ্ছে তাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। স্বপন নাইডু সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমাদের জনগোষ্ঠীতে ৯৭ র্প্বূবর্তী পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মতো আক্রমণাত্মক হতে বাধ্য করবেন না’।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভয়াবহ এই সিদ্ধান্ত বাতিলে সরকারকে আহবান জানিয়ে বলেন, কোন চক্রান্ত, কোন ফাকিবাজি শ্রমিকরা মেনে নেবে না। তারা যে কোন মূল্যে, জীবন দিয়ে হলেও এই জমি নিজেদের করে রাখবে।
তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী এই জমির দখলীস্বত্ব মালিক চা-শ্রমিকরা। তাদের জমির সিদ্ধান্ত তারাই নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। এই জমিকে আবাদযোগ্য বানিয়েছে তারা, সুতরাং তাদের জমি তাদেরই কাছে থাকবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামে বেনিয়াদের হাতে যাবে না।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, চা শ্রমিকরা এমনিতেই অবহেলিত। তারা যে মজুরি পায় তা সাধারণভাবে চিন্তাও করা যায় না। তার উপর তাদের ‘ন্যায়সঙ্গত’ জমিতে তাদেরই অনুমতি ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বানানোর চেষ্টা চালানো এক ধরণের বর্বরতা।
তিনি বলেন, শ্রমিক ঠকানো গরিব মারা সরকার আর তার পৃষ্ঠপোষকদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েও বছরের পর বছর শ্রম-ঘাম দিয়ে সিলেটসহ সারাদেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘোরানো শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত রুখে দেওয়া হবে।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এই চক্রান্ত রোখার আন্দোলনে সিপিবি-বাসদের সঙ্গে অন্যান্য বাম-গণতান্ত্রিক দল ও গোষ্ঠীকে অংশ নেওয়ারও আহবান জানান।বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন উপস্থাপিত ২৮ ডিসেম্বর চা-শ্রমিকদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সিপিবি-বাসদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় লিখিত বক্তব্য নিচের লিঙ্কে পাবেন।
https://www.mediafire.com/?99dx5d7dqmwq47v