৮ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষক ফ্রন্টের স্মারকলিপি পেশ
জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০% বরাদ্দ, আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং চালুসহ
৮ দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃষক ফ্রন্টের স্মারকলিপি পেশ
কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর বাঁচাতে জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দ; প্রতি ইউনিয়নে ক্রয় কেন্দ্র খুলে ৩০% মূল্য সহায়তা দিয়ে উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ফসল ক্রয় করা; আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং চালু; ভিজিএফ, ভিজিডিসহ গ্রামীণ সব প্রকল্পে ঘুষ-দুর্নীতি-দলীয়করণ-লুটপাট বন্ধ; সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহারসহ ৮ দফা দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের উদ্যোগে আজ ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ সারাদেশে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পেশের কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
ঢাকায় আজ ১৫ জানুয়ারি সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক কৃষক-ক্ষেতমজুর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কৃষক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নিখিল দাস। বক্তব্য রাখেন ঢাকা নগর বাসদ নেতা জুলফিকার আলী, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু, কৃষক নেতা রাহাত আহম্মেদ, বেলায়েত হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল ঢাকার রাজপথ প্রদক্ষিণ করে পুরানা পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখান থেকে নিখিল দাস এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন জুলফিকার আলী, রাহাত আহম্মেদ, বেলায়েতে হোসেন ও মো. ইব্রাহীম সর্দার।
৮ দফা দাবিসহ স্মারকলিপির কপি সংযুক্ত করা হলো-
তারিখ: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭
মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়,
এলেনবাড়ী, তেজগাঁও, ঢাকা।
মাধ্যম: জেলা প্রশাসক,
ঢাকা জেলা, ঢাকা।
বিষয়: কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর ও দেশ বাঁচাতে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য স্মারকলিপি পেশ।
জনাব,
শুভেচ্ছা নিবেন। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, বাংলাদেশের কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর-ভূমিহীন জনগোষ্ঠী গভীর সংকটে দিনাতিপাত করছে। কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে বিপাকে পড়ছে, বোরো-আমন মৌসুমে ধানের উৎপাদন খরচও তুলতে পারেনি। এভাবে পাট, ভুট্টা, গম এর ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। বর্তমানে আলু মৌসুম শুরু হয়েছে। যেখানে ১ বস্তা আলু বীজ ১৮০০/= টাকায় কিনতে হয়েছে, সেখানে বাজারে আলুর দাম কমে ১৮০/= টাকা মণে দাঁড়িয়েছে। ভরা মৌসুমে দাম আরো কমে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। আলু চাষে ১ বিঘায় কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ২৩০০০/= টাকা কিন্তু সর্বোচ্চ ১০০ মণ উপাদন হলেও বর্তমান বাজার দরে বিঘা প্রতি কৃষকের লোকসান হবে ৫০০০ টাকা/= থেকে ৬০০০/= টাকা। এমতাবস্থায় কৃষক বাঁচাতে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। এজন্য আমরা প্রতি ইউনিয়নে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র খুলে উৎপাদন খরচের সাথে ৩০% মূল্য সংযোজন করে উৎপাদক কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলুসহ ফসল ক্রয়ের দাবি জানিয়ে আসছি।
তাছাড়া আলু চাষের এলাকায় সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ ও ১০০/= টাকায় ১ বস্তা আলু সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছি।
একদিকে ফসলের দাম নাই অপর দিকে সার-বীজ, কীটনাশক, সেচের ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম ক্রমেই বাড়ছে। এর উপর ভেজাল সার-বীজ, কীটনাশকের উপদ্রুপ তো আছেই। কৃষক যেমন সংকটে তেমনি দেশের ক্ষেতমজুর-ভূমিহীনদের সারা বছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানও অীতব জরুরি। সরকারের অনেকগুলো গ্রামীণ প্রকল্প থাকলেও তাতে ঘুষ, দুর্নীতি, দলীয়করণ, লুটপাট বন্ধ না হওয়ায় তার সুফল গ্রামীণ শ্রমজীবী দরিদ্র জনগোষ্ঠী পাচ্ছে না। এজন্য আমরা আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং চালু, ১৫০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালুসহ গ্রামীণ সকল প্রকল্পে ঘুষ, দুনীতি, লুটপাট বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছি।
উপরোক্ত বিষয়সহ অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৬% এবং কৃষিতে মোট শ্রম শক্তির ৪৯% নিয়োজিত রয়েছে। যা একক খাত হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে আসছে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাই কৃষি-কৃষক-ক্ষেতমজুর তথা দেশ বাঁচাতে কৃষক ফ্রন্টের নিন্মোক্ত ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
আজ সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের উদ্যোগে সারাদেশে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তার অংশ হিসেবে আপনার কাছেও ঢাকা জেলার পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পেশ করা হচ্ছে।
আশা করি আপনি যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের স্মারকলিপিটি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন এবং আমাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আপনার করণীয় ভূমিকা রাখবেন।
কৃষক ফ্রন্টের ৮ দফা দাবি সমূহ-
১. ধান, পাট, গম, আলুসহ কৃষি ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত কর; প্রতি ইউনিয়নে কমপক্ষে ১টি সরকারি ক্রয় কেন্দ্র চালু করে উৎপাদন খরচের সাথে ৩০% মূল্য সহায়তা দিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ফসল ক্রয় কর। সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ কর; ১০০/= টাকায় প্রতিবস্তা আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা কর।
২. কৃষি, কৃষক, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০% বরাদ্দ কর; ভূমিহীন-ক্ষেতমজুরদের সারা বছরের কাজ ও খাদ্যের নিশ্চয়তা দাও; জরুরি ভিত্তিতে ১৫০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প চালু কর; গ্রাম-শহরের শ্রমজীবীদের জন্য আর্মি রেটে রেশনিং চালু কর।
৩. ভূমিহীনদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান কর; খাস জমি উদ্ধার করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে সমবায়ের ভিত্তিতে বরাদ্দ দাও।
৪. বিএডিসিকে পূর্ণ অবয়বে পুনরুজ্জীবিত কর, সক্ষমতা বাড়াও; সার, বীজ, কীটনাশক, সেচে ব্যবহৃত ডিজেল-বিদ্যুতের দাম কমাও; কৃষি উপকরণ ন্যায্যমূল্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত কর; ভেজাল সার, বীজ, কীটনাশক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ কর; মনসান্তোসহ বহুজাতীক কোম্পানির হাইব্রিড বীজ এর নামে বন্ধ্যা বীজ ব্যবসা বন্ধ কর।
৫. আমূল ভূমি সংস্কার কর; পরিবার প্রতি শহরে ৫ কাঠা, গ্রামে ২০ বিঘার বেশি জমি রাখা যাবে না।
৬. সহজ শর্তে স্বল্পসুদে কৃষি ঋণ দাও; ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ সুদসহ মওকুফ কর; সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার কর।
৭. ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিখা, টিআর, বয়স্কভাতাসহ সকল গ্রামীণ প্রকল্পে এবং ব্যাংক ঋণ, ভুমিঅফিস, সাবরেজিষ্ট্রি অফিস, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও সেটেলমেন্ট অফিসে ঘুষ-দুর্নীতি-দলীয়করণ, লুটপাট বন্ধ কর। হাটে-বাজারে সরকারি রেটের অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ কর।
৮. আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ কর; ভূমিদস্যুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও; পাহাড়-সমতলের আদিবাসীদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করা সহ সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও কর্মসংস্থান, নিজস্ব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য চর্চার নিশ্চয়তা দাও।
ধন্যবাদান্তে
নিখিল দাস
দপ্তর সম্পাদক
কেন্দ্রীয় কমিটি
সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট